কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তে খুশি নন অনেক আইনজীবী

বিবিধ
Spread the love

করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অনেক আইনজীবী। তারা বলছেন, আদালত খোলা রাখার এই সিদ্ধান্তে শুধু বিচারক, আইনজীবী সমাজ নয় সমগ্র জনগণের জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দেবে এবং এই মহামারিকে প্রলম্বিত করা হবে। সেজন্য কোন অবস্থায় এবং কোনোভাবেই কোর্ট খোলা যাবে না। ওই সিদ্ধান্ত পুনঃবির্বেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান তারা।

তবে আইনজীবীদের আরেকটি অংশ বলছেন, যারা কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছেন তারা এতদিন কোথায় ছিলেন। কোর্ট খোলার দাবিতে যখন আইনজীবী সমিতি এবং আইনজীবীরা পৃথক পৃথকভাবে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন তখন কেন তার প্রতিবাদ করেননি। কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তের পর তারা এখন সরব ভূমিকায় কেন অবতীর্ণ হলেন?

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে রবিবার থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে সীমিত পরিসরে বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিচারকাজ পরিচালনার সময় যদি আদালত প্রাঙ্গন ও এজলাস কক্ষে সামাজিক ও শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখা না হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বিচারকদের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

এর আগে অধস্তন আদালত খুলে দিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন। এছাড়া উচ্চ আদালত খুলে দিতে কয়েকজন আইনজীবী ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান। এরপরই স্বল্প পরিসরে কোর্ট খোলা রাখতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বৃহস্পতিবার একাধিক সার্কুলার জারি করা হয়।

এদিকে কোর্ট খোলার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্ট দেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী জেডআই খান পান্না লিখেছেন, যখন সমস্ত চিকিৎসকরা বারবার বলছে আগামী ২/৪ সপ্তাহ আমাদের জন্য ভয়ংকর, তখন স্যোশাল মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তি ব্যবসা করার জন্য চিৎকার করছে, সেই চিৎকারের কাছে আমাদের জীবন জিম্মি রাখতে পারি না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদোজ্জা বাদল বলেন, প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, যার মধ্যে ঢাকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৬৪ জেলা লকডাউন। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপ্রার্থীদের কমবেশি সকলকেই সকল জেলা থেকে ঢাকায় আসতে হয়, এটা সবাই জানেন, সামাজিক দূরত্ব কে কিভাবে পালন করবে? কোনটা আগে ‘জীবন না জীবিকা’।

অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ ভূইয়া বলেন, সীমিত আকারে হাইকোর্ট চালু করার সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক এবং বার নের্তৃবৃন্দের দায়িত্বহীন ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রীক উদ্যোগ। সীমিত আকারে কোর্ট বসানোর সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু লিখেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে সতর্ক করছে ঘরে থাকার জন্য, সেই মুহুর্তে কোর্ট সীমিত পরিসরে চালু রাখাও চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু বা সংক্রমণ হলে এর দায়-দায়িত্ব কে নিবে?

তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, আইনজীবীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কোর্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইনজীবীদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা অযথা আদালতে ভিড় করবেন না। শুধু যাদের জরুরি বিষয়সমূহ শুনানির প্রয়োজন রয়েছে তারা যেন আদালতে যান।