যেবার সৌদি আরবে গেলাম

অন্যান্য
Spread the love
ফারাহ্_আজাদ_দোলন
পর্ব –১
★যাত্রা শুরু★
২০১০ সালে বিশেষ একটা সংস্থায় যখন আমার স্বামী কর্মরত তখন সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ এল। সেই সংস্হার ডিজি অর্থাৎ মহাপরিচালক সস্ত্রীক যাবেন তার সাথে একটা উইংএর পরিচালক অর্থাৎ আমার হ্যাজব্যান্ড তৎসঙ্গে আমি, আরো তিনজন অধঃস্তন কর্মকর্তাও আমন্ত্রিত। আমাদের নিখরচায় ওমরা করার সুযোগ এসেছে। এ আনন্দ রাখি কোথায়! আত্নীয় স্বজন সবাই খুশী। দেখা হলেই সবাই বলছে, আমাদের জন্যও একটু দোয়া করো কিন্তু।
ফুল হাতা সব জামা, সাদা হিজাব সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে জেদ্দায় বাংলাদেশ এম্বাসী থেকে ডিফেন্স এটাশে ভাই ওকে,’ বললেন ভাবী তো বোরখা পড়েন না। একটা কালো বোরখা পারলে এনো।’ ও সেটাকে পাত্তা দিল না। অন্য সব ব্যস্ততায় কেন যেন কেনা হল না।
প্রোগ্রাম এভাবে সেট করা হয়েছে দুবাইএ ট্রানজিট। রিয়াদে দু’দিন, মদিনায় দু’ দিন, মক্কায় দু’দিন এরপর দুবাইএ দু’দিন থেকে ঢাকায় ফেরা। তো আমরা রওনা হলাম সম্ভবত সকালে সৌদি এয়ার লাইনসের প্লেনে। চার ঘন্টা পর দুবাই এয়ারপোর্টে যাত্রা বিরতি। প্লেনের খাবার তো বেশীর ভাগ ভাল হয় না। এদের সেবা ভালই ছিল। আমরা এখানে হালকা নাস্তা ও কফি খেলাম। ডিজি ভাই আমাকে আর ওনার মিসেসকে বললেন, “এখানে অনেক সময় থাকতে হবে তোমরা ইচ্ছে করলে স্পা নিতে পারো।” আমি তো লজ্জায় বাঁচি না। স্পা আবার কি জিনিস! চুল কাটা ছাড়া পার্লারে ঢুকিইনি কোনদিন। সেখানে স্পা কিভাবে তাও আবার এয়ারপোর্টে! তারে নারে করে আমরা এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী শপে ঘুরতে লাগলাম। কিছু কসমেটিকস কিনলাম। আর দেখছি গোল্ড শপ। চোখ ধাঁধানো ঝকমকে সব গয়না। ব্রান্ডেড দোকান। জিজ্ঞাসা করে জানলাম এখানে বেশীর ভাগ গয়না তৈরি হয়ে আসে ইন্ডিয়া থেকে। তাও আবার জয়পুর আর ক্যালকাটা থেকে। বেসিক্যালি আরব শেঠদের দেখলাম গয়নার বড় খরিদ্দার। একজন আরবকে দেখলাম ফরাসী পারফিউম কিনছেন প্রচুর। হয়ত গিফট আইটেম। কিন্তু আমি যতদূর জানি পারফিউমকে ইসলামে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। হয়েছে তা নিজের জন্য একান্তে। তবে নামাজের সময় নয়। তাহলে আরবরাও পারফিউম ব্যবহার করে!
এতদিন পরে লেখা সময় ঠিক মনে নেই। তবে যথারীতি জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছুলাম রাত দশটায়। বাট্রাস ডিজাইনের এয়ারপোর্ট জেদ্দা। মোটামুটি বড়। খুবই দ্রুত আমরা সাতজন পৌঁছে গেলাম ভেতরে। এয়ারপোর্টের ফর্মালিটিজ বলতে কিছুই বুঝলাম না এবার। যেন সব কিছু পূর্ব নির্ধারিত। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ এ্যাম্বাসীর লোকজন সেখানে উপস্থিত। আমাকে একটু আলাদা ডেকে নিয়ে ডিফেন্স এ্যাটাশের মিসেস ভাবী একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ভাবী এটা পরে নিন।’ ওয়াসরুমে ঢুকে প্যাকেট খুলে দেখি একটা কালো বোরখা। তিনি জানালেন এটা পড়েই এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে হবে। দেখলাম ডিজির মিসেসও আরেকটি কালো বোরখা পরে নিয়েছেন। তার অবশ্য সৌদি ভ্রমণের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তখনই জানলাম বোরখা ছাড়া রিয়াদে প্রবেশ করা যাবে না।
এয়ারপোর্টের বাইরে এসে খেয়াল করে দেখলাম সৌদি সেনাবাহিনীর লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের জন্য অপেক্ষমান ফোর্ড গাড়ি। প্রথমে ডিজির গাড়ি তারপর আমাদের জন্য নির্ধারিত গাড়িতে আমরা দু’জন বসলাম। ড্রাইভার ও সেকেন্ড সিটার দুজনই আর্মির। তারা কেউ কোন কথা না বলে গন্তব্য রিয়াদের উদ্দেশ্যে রওনা করল। পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।
( চলবে)