মায়ের অপহরণ নাটকের মূলহোতা মরিয়ম মান্নান

বাংলাদেশ
Spread the love

বাংলা ডেস্ক:
অপহরণ নয়, জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে মেয়ে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বেই প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে রহিমা বেগমের অপহরণ নাটক সাজানো হয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগম ‘অপহরণ’ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অপহরণ মামলা প্রমাণিত না হওয়ায় রহিমা বেগম এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এছাড়া অপহরণ মামলায় যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাদেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

আজ সোমবার সকালে দেশব্যাপী আলোচিত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সংস্থাটির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

এর আগে সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তদন্তে উঠে এসেছে এটি অপহরণ নয়, প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ওই ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়েছিলেন রহিমা এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম ও আদুরি’।

রহিমার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করাসহ তার মেয়েদের দৌড়ঝাঁপ অনেক মানুষকে আবেগতাড়িত করে। রহিমাকে উদ্ধারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয় মানুষ। নিখোঁজের ২৯ দিন পর রহিমাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে অপহরণের দাবি করে জবানবন্দি দেন রহিমা। এরপর মেয়ে আদুরির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় আদালত। পরে মরিয়ম বলেন, তার মা অপহৃত হয়েছেন বলে শুরুতে তিনি মনে করলেও তার ধারণা পাল্টেছে। তিনি এখন মনে করছেন, স্বেচ্ছায়ই চলে গিয়েছিলেন তার মা।

সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সে সময় বলেন, ‘জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিয়েছেন আর প্রতিবেশীরা প্রতিবারই সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলার এজাহারে যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই ওই নাটক করা হয়েছে’।

‘আত্মগোপনে’ যেতে ‘নিখোঁজের দিন’ মরিয়ম মাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন। এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তবে ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। এ ব্যাপারে মরিয়ম বলেছিলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে কী পেয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় মাকে অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমাকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরি আক্তার। ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।