ভারতের বিরোধী দলগুলোর বৈঠক, নতুন জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’

আন্তর্জাতিক
Spread the love

বাংলা ডেস্ক :
লক্ষ্য আগামী বছর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্র থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারকে উৎখাত করা। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই নতুন বিরোধী জোট তৈরি করল কংগ্রেসসহ অবিজেপি দলগুলো। দেশটির কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদলীয় জোটের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সর্বসম্মতভাবে জোটের নামকরণ হয়। নাম দেওয়া হয় ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (INDIA)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে ‘ইন্ডিয়া’।

বৈঠক শেষে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন ‘আমি খুশি যে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য উপস্থিত রয়েছে। এই বৈঠকে আমাদের উদ্দেশ্য নিজেদের জন্য ক্ষমতা অর্জন করা নয়। দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার রক্ষার জন্যই এই বৈঠক। দেশের স্বার্থে আমাদের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা খুব জরুরি। আপনারা সকলে আসুন আমরা ভারতকে প্রগতি, কল্যাণ ও প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়ার সংকল্প করি।’
বিরোধী জোটকে কে নেতৃতত্ব দেবে বা ‘ইন্ডিয়া’এর নতুন মুখ কে হবেন, এব্যাপারে খাড়গে জানান ‘১১ জন সদস্যকে নিয়ে একটি কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হবে। সেখানেই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। যদিও বিরোধী দলগুলোর এই মহাজোটের কাজকর্ম করার জন্য দিল্লিতে একটি অফিস করা হবে।’

তিনি আরো বলেন ‘বর্তমানে আমরা ১১টি রাজ্যে ক্ষমতায় আছি। আর বিজেপি নিজে থেকে ৩০৩ টি আসন পায়নি। তার শরিক দলগুলির ভোট ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে এবং তারপর তাদের পরিত্যাগ করেছে। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং তাদের নেতারা তাদের পুরানো শরিক দলগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করতে রাজ্যে রাজ্যে ছুটছেন। আসলে আমাদের আজকের বৈঠকের ঐক্য দেখে তারা ভীত যে আগামী বছর তাদের পরাজয় ঘটবে। তার অভিযোগ প্রতিটি এজেন্সিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হচ্ছে।’ মুম্বাইতে বিরোধীদলের পরবর্তী বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি। যদিও দিনক্ষণ এখনো স্থির হয়নি।

দুদিনের এই কনক্লেভে সোমবার ছিল ডিনার ও ইনফরমাল বৈঠক। মঙ্গলবার ছিল মূল বৈঠক। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, আরজেডি, জেডিইউ, ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টি, পিডিপি, সমাজবাদী পার্টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, এনসিপি, সিপিআইএম, শিবসেনা সহ ২৬ টি বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা।

এদিনের বৈঠক থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে আক্রমণ করে একাধিক দলের নেতারা বলেন তাদের উদ্দেশ্য একটাই- দেশ, গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষা করা।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জানান ‘আমাদের আজকের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ এবং সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’ জোটের নতুন নামকরণ নিয়ে রাহুল জানান ‘এটি ইন্ডিয়া এবং বিজেপি, ইন্ডিয়া এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে লড়াই। ভারত একত্রিত হবে ইন্ডিয়া জিতবে।’

তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন ‘এই বৈঠক অত্যন্ত ভালো ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আজ আমরা যা আলোচনা করেছি, এর পরের ফলাফল হয়তো এদেশের মানুষের জন্য ভালো হতে পারে।’ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) কে কটাক্ষ করে মমতা বলেন ‘এনডিএ তোমরা কি ইন্ডিয়া’কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে? ইন্ডিয়া জিতবে, বিজেপি হারবে।’

বিরোধী জোটের নতুন নামকরণের পরেই শিবসেনা (ইউবিটি) নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে টিম ইন্ডিয়া ও টিম এনডিএ’ এর মধ্যে। চাক দে ইন্ডিয়া।’

আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ১০ বছরের শাসনকালে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ জগাখিচুড়ি করেছেন। রেল অর্থনীতি, জলপরিবহন সবকিছুই এই বিজেপি সরকার ধ্বংস করেছে। এবার তার হাত থেকে পরিত্রাণের সময় এসেছে।’

আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ বলেছেন ‘দেশ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে এবং দরিদ্র, যুবক, কৃষক, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে। নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে সবকিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।’

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ’এর দাবি কেন্দ্রে মোদী সরকারের শাসনামলে সংবিধানকে ক্ষয় করা হয়েছে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে।’

সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন ‘এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ভারতকে বাঁচাতে চাই, আমরা জানি ভারত কী। দেশটি বেশি মাত্রায় বহুমাত্রিক হামলার মধ্যে রয়েছে। ভালোর জন্য পরিবর্তনের জন্য এই দেশকে বাঁচাতে হবে।’