বুড়িগঙ্গায় বিআইডব্লিউটিএ’র অভিযানে তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ

দেশবাণী
Spread the love

ঢাকার প্রাণ প্রবাহ বুড়িগঙ্গা হলেও অবৈধ দখলদারদের কারণে দিন দিন এই নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। এক থেকে আটতলা পর্যন্ত পাকা ভবন, কারখানা, স্কুল কলেজ সবই আছে অবৈধ স্থাপনায়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ১১ দিনের অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)।গত দুইদিনে চলা অভিযানে প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর মূল নদী বুড়িগঙ্গা। নদীটি সচল ও দূষণমুক্ত রাখা এবং এটাকে সৌন্দর্যমন্ডিত রাখা বহুদিন থেকে নগরবাসীর দাবি।

সরকারও সে দাবির প্রতি সম্মান জানিয়েছে। পাশাপাশি একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। এখন নানান সুপারিশের বাস্তবায়ন করা উচিত।নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম  বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের খবর আমরা প্রায় শুনতে পাই। কিন্তু কিছুদিন পর আবার দখলে নেয় দখলকারীরা। উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, উচ্ছেদ স্থানকে প্লান করে একটি সৌন্দর্যমন্ডিত ও রক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে জায়গা উদ্ধারের পর সেখানে কি হবে তা আগে থেকে পরিকল্পনা নেয়া উচিত। আমরা হাতিরঝিল উদ্ধারের সময় দেখেছি, উদ্ধার করার পর ধরে রাখা যায় না। উদ্ধার করে রেখে দিলে কেউ না কেউ দখল করে নেবে। এখন একজন দখল করেছে, পরে আরেকজন দখল করবে। নদী দূষণ মুক্ত করতে হলে পুরো এলাকা উদ্ধার করতে হবে। জানতে পারলাম উনারা উদ্ধারের স্থানে হাঁটার রাস্তা করবে। কিন্তু সেটা পাশ হতে হতে সে সময়ে ফের দখলে চলে যাবে বলে আমি পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি। আমরা আশায় আছি, এবারের উদ্ধারের অভিযানের পর পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নদীকে দখল ও দুষণমুক্ত করতে কাজ করবে।

এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ বুধবার ওয়াইজঘাট এলাকা থেকে শুরু হয়ে সোয়ারীঘাট ও কামরাঙ্গীর চরের নবাবচর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান।তিনি  জানান, কামরাঙ্গীর চরের খোলামুরা এলাকায় ৫ থেকে ৭টি ৪ তলা থেকে ৮ তলা ভবন নদী সীমানায় প্রবেশ করেন। যা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এক তলা থেকে ৩ তলা ভবন ছিল ৪ থেকে ৬টি। একজনকে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া নদীর ভেতরে মদিনা ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনেকটুকু জায়গা দখল করে ছিল। যাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ১ থেকে দেড়শটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।একই স্থানে আগামীকালও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান।

 দুইদিনের অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উচ্ছেদ করা বাড়িগুলো নদীতে অবৈধভাবে দালান ও মাচা দিয়ে স্থাপনা গড়েছিল। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। যা দূর থেকে বুঝাই মুশকিল যে জায়গাটি তাদের নয়। অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, আগামীতেও দেয়া হবে না।বিআইডব্লিউটিএর ১১ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের মধ্যে-মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জ থানার কালীগঞ্জ তেলঘাট এলাকা পর্যন্ত অভিযান চলে। বৃহস্পতিবার ওয়াইজঘাট এলাকা থেকে শুরু হয়ে সোয়ারীঘাট ও কামরাঙ্গীর চরের নবাবচর পর্যন্ত অভিযান চলবে। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের মুখ থেকে লোহারপুল পর্যন্ত।৭ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরে। ১২ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর এলাকা থেকে খোলামোড়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর বড়বাজার এলাকা থেকে শুরু করে আবারও কাটাসুর আমিন মোমিন হাউজিং পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।