বগুড়ায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের খোলা খাবার!! স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনতা

দেশবাণী
Spread the love

বিধান সিংহঃ বগুড়াসহ সারাদেশে রাস্তার পাশে ফুটপাতে হরেক রকমের খাবার তৈরি করে বিক্রি করছে একদল দোকানী। কতটা নিরাপদ সেই খাবার! পথের ধারে খোলা জায়গাতেই তৈরি হচ্ছে খাবার । দেশের বড় বড় শহরগুলোর মত বগুড়া শহরের প্রায় সড়কের পাশে কিংবা ফুটপাথেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবারের দোকান। স্ট্রীটফুড বা পথ-খাবার হিসেবে একদিকে সহজলভ্য অন্যদিকে সস্তা হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় এসব খাবার। রকম ভেদে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই খাচ্ছেন । কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ পথ-খাবারেই নানা ধরনের জীবাণু রয়েছে। দিনের শুরুতে বগুড়া শহরের ব্যস্ততম এলাকা সাতমাথাসহ শহরের অলিগলিতে এবং শহরতলীর বেশ কিছু সড়কের খোলা জায়গায় অবিরত বিক্রি হচ্ছে এসব খোলা খাবার। মধ্যবিত্ত কর্মজীবীরা অফিসের কাজের ফাকে কিংবা শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে এসে এসব খাবার খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ভাবছেন না কেউ? কতটাই বা সচেতন ক্রেতারা? যদিও তারা জানে এগুলো খাওয়া ঠিক না, অনেক ধুলোবালি থাকে। তার পরেও দেদারছে খেয়ে চলেছে হরদম। যদি চায়ের কথা বলি অনেক বাঁসি দুধের ভিতর নতুন করে দুধ ঢেলে প্রতিনিয়ত তৈরী করছে দুধচা। সময়ের ব্যস্ততায় ঠিকমত কাপও ধুতে পারে না। আমরা হয়তো জেনে শুনেই বাঁসি দুধের চা জীবানুযুক্ত কাপেই থেয়ে ফেলছি । একই পানির ড্রামে প্রতিদিন পানি রাখা হচ্ছে, ড্রাম ধোওয়া বা পানি বদলের নেই কোন উদ্যোগ। সেই পানিই খেয়ে যাচ্ছে তৃষ্ণার্তরা। ভাবছেনা তার পরিনামের কথা। গ্রাহকরা একবারও ভাবছে না এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া। তাদের কম টাকায় চা-বিস্কুট পেতে চাইলে ফুটপাথের দোকানই ভরসা”। সরজমিনে দেখা যায় শহরের বিদ্যুুৎ অফিস রোডে, স্টেশন রোডে,রেল ঘুমটির আশেপাশে, হাটবাজারের পাশে একাধিক ফুটপাথের দোকানে বসে খাবার খেয়ে যাচ্ছে বেশকিছু লোক।শহরের বিদু্যুৎ অফিস রোডে দোকানের পাশেই লেপের দোকান । যা থেকে অবিরত ছড়াচ্ছে ধুলিকনা। তার পরেও কর্মজীবী মানুষেরা দুপুরের খাবার খেতে বসেছেন। আয় আর ব্যয়ের লাগাম টানতে ফুটপাথের খাবারের কাছেই তাদের বারবার যেতে হচ্ছে। কম খরচে খেতে হলে এইসব সালাদিয়া ঢাকা হোটেল ছাড়া আর কোনও উপায় নেই নি¤œ আয়ের মানুষের। শহরের প্রায় রোডেই ফুটপাথের ওপর একটি ভবনের দেয়ালকে একপাশে রেখে অন্যপাশে কাপড় ঝুলিয়ে বেষ্টনী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এসব দোকান। শহরের টিএন্ডটি রোডে ডজন খানেক রুটির দোকানে এক সাথে ৮/১০জন বসে দেদারছে রুটি খেয়ে যাচ্ছেন কর্মজীবী মানুষেরা । ফুটপাতের প্রায় সেদ্ধডিম বিক্রেতার হাতে পচন ধরে জীবানু ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার পরেও থেমে নেই ডিম খাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা। রতন নামের এক চাকুরীজীবির সাথে খোলা খাবার নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান “মাসের মাইনে পাওয়ার প্রথম দিকে হয়তো সহকর্মী বা বন্ধুদের সাথে ভাল হোটেলে খেতে যান । কিন্তু আয় আর ব্যয়ের লাগাম টানতে ফুটপাতের খাবারের কাছেই আবার ফিরতে হয় । কম খরচে খেতে হলে এই সালাদিয়া ঢাকা হোটেল ছাড়া আর কোনও উপায় নেই”। পরিছন্নতার কথা প্রসঙ্গে কালাম নামে এক হোটেল কর্মী বলছেন, যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন একজন বিক্রেতা গড়ে প্রায় দেড়শো জনের কাছে পথ-খাবার বিক্রি করেন। এসব খাবারের মধ্যে আরও রয়েছে চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, পিঠা, রুটি পরোটা, শরবত, ডিম-সেদ্ধসহ নানান খাবার। এদের হাতে থাকা নানান জীবাণু এবং ধূলোবালির জীবাণূ সহজেই মিশে যাচ্ছে মানুষের শরীরে।তার পরেও খাচ্ছে গ্রাহকরা। এর প্রধান কারণ বিক্রেতাদের অসচেতনতা। আইসিডিডিআরবির সহযোগী বৈজ্ঞানিক ড আলেয়া নাহিদ জানান, খাবার বানাচ্ছে হাত দিয়ে। কিন্তু হাত ধুতে পারছে না। ফলে তাদের হাত থেকে রোগ জীবাণু মিশে যাচ্ছে খাবারে”। রাস্তার পাশে বসা চেয়ারে বসে ফুচকা চটপটি খেতে খেতে অনেকেই বলছিলেন রাস্তার ধারের এই খাবার ঘরে তৈরি করলেও এমন স্বাদ মেলে না। স্ব্যাস্থ্যঝূঁকি আছে জেনেও ফুচকা চটপটি খাচ্ছে গ্রাহকরা। গবেষকরা বলছেন, প্রায় নব্বই ভাগ বিক্রেতার হাতেই জীবাণু থাকে। যার ফলে টাইফয়েড, আমাশয়,গ্যাষ্টিক, আলসার, ডায়রিয়া থেকে শুরু করে খাদ্য এবং পানি-বাহিত যেকোনো রোগের কারণ হতে পারে এইসব খাবার। মানুষ জেনে শুনে অবিরত খেয়ে যাচ্ছে এসব বিষ। তিনি বলেন লাখ লাখ বিক্রেতার আচরণ পাল্টানো সহজ নয়। তবে পাইলট পদ্ধতিতে তাদের সচেতন করে এবং নিরাপদ খাদ্য আইনের সংস্কার করে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। বিক্রেতা ও গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী বলে মানে করেন সচেতন মহল।