বগুড়ায় মান্নানের জামা পেয়ে ঈদের আনন্দে ভাসলো শিশুরা

দেশবাণী
Spread the love

সকাল, সকাল রুমে থেকে ডেকে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দাঁড় করা হয়েছে ১৩৫ জন শিশুকে। প্রতিটি শিশুই একে অপরের চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে। কি আর কেনই বা তাদের দাঁড় করানো হলো। সকাল সাড়ে নয়টা। রমজান ও ঈদ সব মিলিয়ে তাদের মনে নানা কৌতুহল। কৌতুহল শেষ হয় সকাল পৌনে ১০ টার সময়। সবুজ ঘাসের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা একজনকে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই দুই একজন শিশু বলে উঠলো ইলিশ স্যার, ইলিশ স্যার আসতেছে। আরেক শিশু বলে উঠলো আরে না না গতবার ঈদে নতুন জামা দিয়েছিল এবারো তাই দেবে।

ঈদের জামা নতুন- এমন কথা শুনেই বেশ হাসিমুখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। মাস্কের উপরে ভেসে থাকা শিশুদের দু চোখে আনন্দ, আর সেই আনন্দ বয়ে যাওয়ার সংবাদ জানান দিয়ে গেল সকালের নির্মল বাতাস।এই বিষয়গুলো শনিবার সকালে বগুড়া সরকারি শিশু পরিবাররে (বালিকা)। সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসিদের কেউ বাবা হারা কেউ মা হারা আবার কেউ মা বাবা দুজনকেই হারিয়েছে। সেই শিশু পরিবারের নিবাসিদের মধ্যে বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের অধিকর্তা সমাজসেবক ঠিকাদার  আব্দুল মান্নান আকন্দ ঈদের নতুন জামা উপহার হিসেবে তুলে দিল।শনিবার ১৬ মে সকালে প্রতিটি শিশুর হাতে একটি ঈদের জামা তুলে দেয়ার পর প্রতিটি শিশুই আনন্দ প্রকাশ করে। খুব উৎসাহের সাথে ঈদের পোষাকটি হাতে নেয়। হাতে নেয়ার পর অনেক শিশুই নেড়েচেড়ে দেখছিল তার জামাটি কেমন। যেন ঈদের আগেই ঈদের আনন্দ।

জানা যায়, বগুড়া শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি, শুকরা এন্টারপ্রাইজের অধিকর্তা সমাজসেবক ঠিকাদার মানবিক আব্দুল মান্নান আকন্দ চলতি করোনা ভাইরাস এর মধ্যে বগুড়া পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের অস্বচ্ছল ১৪ হাজার মানুষকে বেশ কিছুদিন সবজি খিচুরি দিয়ে ইফতার করিয়েছে। করোনা ভাইরাসের আগে থেকে প্রতিদিন শতাধিক মানুষকে তিনি তিনবেলা ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কয়েকশত ছাত্রকে স্কুলের বেতন, মেধাবী কোটায় বিশ^বিদ্যালয়ের ফি, রাস্তা ঘাটও তিনি নির্মাণ করে দিয়েছেন। এবার তিনি ঈদের আগে তার ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে শিশুদের ঈদের জামা প্রদান করছেন। আর এই কাজে আরো একজন ব্যবসায়ি নাহারুল ইসলাম তাকে সহযোগতিা করেছেন। নাহারুল ইসলাম তার একটি সাদা রঙের কার বিক্রি করে দিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিয়ে শিশুদের মাঝে নতুন জামা উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছেন। গাড়ী বিক্রির টাকার সাথে আব্দুল মান্নান আকন্দ আরো বেশ কিছু টাকা দিয়ে ১৪ হাজার শিশুর জন্য নতুন জামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামা বিতরন করা হবে। আব্দুল মান্নান আকন্দের পরামর্শে নতুন পোষাকগুলো বগুড়া পৌর এলাকার ২১টি ওয়ার্ডের প্রাথমিক স্কুলের অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

শুভ সংঘ এর উপদেষ্টা ব্যবসায়ী নাহারুল ইসলাম জানান, বগুড়ার সোনাতলার জোড়গাছায় জন্ম তার। এখন পরিবার নিয়ে থাকেন বগুড়া শহরের জহুরুল নগরে। বগুড়ার অন্যতম সমাজসেবক আব্দুল মান্নান আকন্দের অনুপ্রেরনায় তিনি সমাজসেবা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন আব্দুল মান্নান আকন্দ যে ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে তা সমাজের জন্য অনুকরনীয়। এক্স করোলা সাদা রংয়ের কার বিক্রি করা কোন বিষয়না। আব্দুল মান্নান আকন্দ জনগণের জন্য মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন। এমন কাজে আনেকের এগিয়ে আসা উচিত। যতটুকু করেছি তারই ভালবাসায় করেছি।বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের প্রধানকর্তা ঠিকাদার ও শুভ সংঘের প্রধান উপদেষ্টা  আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, এখনো অনেক বাকি। আমি সবটা একা করতে পারছি না। অনেক মানুষের অভাব রয়েছে। একে সমাজের অনেক মানুষ কর্মহীন। এর সাথে করোনা ভাইরাস দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছে। এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পারলে শান্তি পাই। না করতে পারলেই বরং কষ্ট হয়। মানুষ মানুষের জন্য। এই কথাটি বারবার মনে পড়ে যায়। মানুষই যদি না থাকে তাহলে দেশ বা পৃথিবী দিয়ে কি হবে। মানুষ বাঁচলে তাদের মধ্যে আব্দুল মান্নান আকন্দও বাঁচবে।

শনিবার কালেরকণ্ঠ পত্রিকার পাঠকদের নিয়ে গড়া শুভসংঘের আয়োজনে বগুড়া সরকারি শিশু পরিবারে ঈদের নতুন জামা বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন সরকারী শিশু পরিবারের উপ-তত্বাবধায়ক রীপা মোনালিসা, বগুড়া পৌর আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান লিটন, বগুড়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু, কালের কণ্ঠ বগুড়া ব্যুরো প্রধান লিমন বাশার, শুভসংঘের শিশির মোস্তাফিজ, ছাত্রলীগনেতা আহম্মেদ হোসাইন নাঈম প্রমুখ।