এনন টেক্স ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি

অর্থনীতি
Spread the love

বাংলাবাণী  ডেস্কঃ বিসমিল্লাহ্ গ্রুপ এবং এনন টেক্স গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ। বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতিতে দুদকের মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম। ওই সময় তিনি প্রভাবশালীদের তদবিরে অভিযোগের দায় থেকে সাময়িকভাবে মুক্ত হয়েছিলেন। দুদকের মামলায় দু’দফা তদন্তে তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে আসছে, শাখা প্রধান হিসেবে আবদুছ ছালাম আজাদ বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির দায় এড়াতে পারেন না। বর্তমানে দুদক তাকে ওই সময় অব্যাহতি দেয়ার কারণ খুঁজছে বলে জানা গেছে। বিসমিল্লাহ এবং এনন টেক্স দুই গ্রুপের ঘটনার সময়ই তিনি জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।

বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির মামলা থেকে আবদুছ ছালামকে অব্যাহতি দেয়ার কারণ নতুন করে খুঁজতে শুরু করেছে দুদক। অন্যদিকে এনন টেক্স সংক্রান্ত রিপোর্টটি দুদকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং শাখার দু’জন পরিচালককে প্রাথমিক অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টটি পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এখন আমাদের টিম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। অনুসন্ধানের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি : আবদুছ ছালাম আজাদ যখন জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তখন এ শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ৩৩৩ কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নিয়েছিল। যার পুরোটাই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পুরো ঋণটিই এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। এ ঘটনা প্রকাশিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশদ তদন্ত করে। তাদের তদন্তে এ ঘটনার দায়ে আবদুছ ছালাম আজাদসহ কয়েক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে দুদক ওই শাখার ঘটনায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৮ জন ও শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক আবদুছ ছালাম আজাদসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ১৫ জনকে আসামি করে ২০১৩ সালে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলা দুটির বাদী ছিলেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন কর্পোরেট শাখায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়। এর মধ্যে শাহরীশ কম্পোজিট টাওয়েলকে ১৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং আলফা কম্পোজিট টাওয়েলকে ১৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয় জালিয়াতির মাধ্যমে। ২০১১ ও ২০১২ সালের মধ্যেই এসব জালিয়াতির বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে। রফতানি বিল দেশে না আসায় তার বিপরীতে ফোর্স লোন তৈরি করে গ্রাহকের দেনা শোধ করার মত বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে।

এনন টেক্স গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি : ইউনুস বাদল জনতা ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের নামে ৫৭৬৮ কোটি টাকা বের করে নেন। ওই টাকার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তিনি একটি ‘ডামি ফ্যাক্টরি’ করেন। বাকি টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দেন। একটি দেশে তিনি ‘সিসার’ বারও দেন। ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি প্রচার করেন। অথচ, তিনি প্রায় বেশিরভাগ অর্থ পাচার করে দিয়ে বেশ ভালোই আছেন। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির নামেও অভিনব জালিয়াতি করেছে গ্রুপটি।

জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে জনতা ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদল নিজেই । এর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির কোনো সম্পর্ক নেই। এ জালিয়াতিতে সরাসরি সহায়তা করেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুছ ছালাম আজাদ। এ সংক্রান্ত পরিদর্শন রিপোর্টেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি ওই রিপোর্টটি দুদকেও পাঠানো হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনন টেক্স গ্রুপের কর্ণধার ইউনুস বাদল বিএনপির প্রয়াত নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করেন। নানা ধরনের অপরাধেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গাড়ি চুরির পর নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় গাড়ি চুরি মামলায় তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের বর্তমান ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমানের টিমের হাতে। ওই সময় তাকে যাতে ‘গাড়ি চোর’ হিসেবে টিভিতে কোনো সংবাদ প্রচার না হয় সেজন্য টিমের এক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা তা নাকচ করে দেন।

যথারীতি গাড়ি চোর হিসেবে ইউনুস বাদলের নাম মিডিয়াতে চলে আসে। ইউনুস বাদল দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও এনন টেক্সের ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।