উন্নয়নে দাতাদের কার্যকর অংশগ্রহণ চায় ঢাকা, যৌথ ইশতেহারে সমাপ্ত বিডিএফ সম্মেলন

বাংলাদেশ
Spread the love

বাংলাবাণী ডেস্কঃ দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যকর অংশগ্রহণ চেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বণিজ্য বৃদ্ধি এবং জ্বালানি নিরাপত্তাসহ ৮ খাতে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। দু’দিনের বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলনে এ সহায়তা চাওয়া হয়।

এছাড়া মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, প্রবৃদ্ধি সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছাতে গ্রামীণ রূপান্তর, সৃজনশীল অর্থায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা ও টেকসই শহর গড়তে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজি বাস্তবায়নেও কার্যকর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বুধবার উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই সম্মেলনের উদ্বাধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিডিএফের সমাপনী অধিবেশন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ৫ বছরে ১ কোটি ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ কিছুটা নিম্নপর্যায়ে হলেও এটি বাড়াতে নানা উদ্যোগ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ আছে। আমাদের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কেউ লস করবে না। এ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত।

পৃথিবী ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। শুধু মানুষের জন্য নয়, পৃথিবীর জন্য এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এসডিজি বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে কিছুটা চাপ হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। গত ১০ বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা এগিয়ে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, হংকং ও মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশকে ছাড়িয়ে যাবে।

সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। অধিবেশন পরিচালনা করেন ইআরডির সচিব মনোয়ার আহমেদ।

সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অধিবেশন ছাড়াও চারটি অধিবেশন। এসব অধিবেশনে জ্বালানি নিরাপত্তা, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা এবং টেকসই শহরায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা জরুরি। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলেও একটি সিঙ্গেল পেনিও চোখে পড়েনি। কেবল প্রেসক্রিপশন নয়, অর্থ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।

২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে পার্টনারশিপের মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। প্রচুর সম্পদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।

ড. মসিউর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা এমডিজির মতোই সাফল্য নিয়ে আসব। জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ চলছে। পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপ আমাদের বড় ইনোভেশন। একে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে। মিয়া সেপ্পো বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে যা যা করণীয়, করতে হবে।

এসডিজি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অবশ্যই প্রশংসনীয়। গড় আয়ু বেড়েছে। এদিকে ‘এনার্জি সিকিউরিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল গ্রোথ’ শীর্ষক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ। বক্তারা বলেন, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উঠেছে। কিন্তু প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন করা। এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ জরুরি। এজন্য সরকার নীতিমালা তৈরি করছে, যাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। জ্বালানি ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা কমানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হয়।

‘সাসটেইনেবল সিটিস : সার্ভিস অ্যান্ড প্রোটেকশন ফর দ্য ভালনারেবল’ শীর্ষক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহিদ উল্লা। এ সময় মন্ত্রী জানান, শহরের দারিদ্র্যদের বসবাসের জন্য সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এবারের বিডিএফ সম্মেলনে ৩৫-৪০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।