আজ ভালোবাসায় ভিজবে বইমেলা

বিবিধ
Spread the love

প্রিয়জনকে যে কথা মুখে বলা যায় না, লেখক সে কথাই যেন বলে দেন প্রেমিকের হয়ে। ভালোবাসা আর বই যেন একই সূত্রেগাঁথা। সে জন্যই প্রেমিক মন খোঁজে বইয়ের আশ্রয়। প্রিয়জনের হাতে তুলে দেয় প্রেমের প্রিয় পংক্তিমালা। মনের কথা কবির পংক্তিমালায় ভর করে প্রেমিককে জানান দেয় ভালোবাসার। লাল গোলাপের সাথে নতুন বই তুলে দিয়ে প্রিয়জনকে আজ অনেকেই করবেন প্রেম নিবেদন। আজ ভালোবাসা দিবসে তাই বইমেলাই হয়ে উঠবে যেন প্রধান গন্তব্য। গতকাল বসন্ত উত্সবে মেতে বইমেলাকে রাঙিয়ে তুলেছিল তরুণ-তরুণীরা। আজ ভালোবাসায় ভিজবে বইমেলা। তাই সকাল থেকেই মেলা জমে উঠবে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বইমেলার স্টলে স্টলে চলে এসেছে উপন্যাস, গল্প, কবিতার বই।

বাঙালির সংস্কৃতির অংশ এ বসন্ত উত্সবকে ঘিরে নারীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে হাতে-খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুলসহ বাহারি ফুলে নিজেদের সাজিয়ে আসে মেলা প্রাঙ্গণে। সেই সঙ্গে হাতে বাজে রিনিঝিনি শব্দে কাঁচের চুড়ি। অনেকে আবার পরিবারসহ মেলায় এসেছে বসন্তের সাজে। পুরুষরাও নিজেদের সাজ-পোশাকে রেখেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্তের প্রথম দিনে আজ মেলার অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে বলে প্রকাশকরা জানান। শুধু পাঠকদের মাঝেই না, বসন্তের এ আগামনী ছোঁয়া লেগেছিল স্টলগুলোতেও। বিক্রয় কর্মীরাও সেজে এসেছিলেন বসন্তের রঙে। প্রতিটি স্টলে ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। যাচাই বাছাই করে তাদের পছন্দের লেখকের বইটি কিনতে দেখা গেছে।

রফিক আজাদ মানেই জীবন, তারুণ্য এবং সুন্দরের প্রতি পক্ষপাত

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিত্ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, কবি ফারুক মাহমুদ এবং কবি জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথা সাহিত্যিক রশীদ হায়দার।

রশীদ হায়দার বলেন, রফিক আজাদ মানেই জীবন, তারুণ্য এবং সুন্দরের প্রতি পক্ষপাত। তাঁর মতো বিশুদ্ধ কবির আবির্ভাব বাংলাদেশের কবিতার জগতকে করেছে ঋদ্ধ। কবিসত্তার বাইরে তাঁর ব্যক্তিসত্তাও ছিল সমান আকর্ষণীয়। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর মতো দেশপ্রেমিক, বন্ধুবত্সল, উদার-মানবিক মানুষের সন্ধান পাওয়া সত্যিই কঠিন ব্যাপার। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি রফিক আজাদের ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে স্মরণের আয়োজন করে কবিতাপ্রেমী ও সাহিত্যানুরাগী সকলের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং টোকন ঠাকুর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী রফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খান বকুল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মিজান মাহমুদ রাজীব, ফারহানা শিরিন এবং তানজিনা করিম স্বরলিপি। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ।

লেখক বলছি :অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন শহীদ ইকবাল, মণিকা চক্রবর্তী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারুক সুমন এবং আহম্মেদ শরীফ।

নতুন বই :অমর একুশে গ্রন্থমেলার গতকাল ছিল ১৩তম দিন। এ দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭২টি। এর মধ্যে গল্প ২৬টি, উপন্যাস ২৭টি, প্রবন্ধ ১৭টি, কবিতা ৬৩টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ১টি, ভ্রমণ ৪টি, ইতিহাস বিষয়ক ২টি, স্বাস্থ্য ১টি এবং অন্যান্য ১৪টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিঙেফুল থেকে লিয়াকত আলীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘কবি’, অমর প্রকাশনী থেকে মোঃ সিরাজুল ইসলামের পত্র বিষয়ক ‘হূদয়ের প্রান্তরে’, কথাপ্রকাশ থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘সময় বহিয়া যায়’ রামেন্দু মজুমদারের ‘বুদ্ধিজীবীর দায় ও অন্যান্য’, উত্স প্রকাশন থেকে আবু সাঈদ চৌধুরীর সংকলন ‘রূপায়ন’, জনপ্রিয় প্রকাশনী থেকে ড. মোঃ শরাফত হোসেনের কাব্যগ্রন্থ ‘মুকতো কবিতা’, আলীগড় লাইব্রেরি থেকে আব্দুল কাদের জিলানীর প্রবন্ধ ‘জুনিয়র সক্রেটিস’, তরফদার প্রকাশনী থেকে ফাহমিদা চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনার ইন্দ্রজাল’।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

গতকালের বইমেলায় ঝালকাঠি পাবলিকেশন্সের দ্বিতীয় বই ‘মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। বইটির গবেষণা ও সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম, আখতারুজ্জামান ও মিনার মাসুদ।