মহাকাশের বুকে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ
Spread the love
মহাকাশের বুকে বাংলাদেশের দীপ্ত পদচারণার ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। দেশব্যাপী মানুষের তুমুল আগ্রহ ও উত্তেজনা বাংলাদেশের প্রথম নিজেদের স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ নিয়ে। যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইটটি তিন ধরনের সেবা দিতে সক্ষম। যেমন সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। আমাদের এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে টেলিভিশন এবং রেডিও স্টেশনগুলো  তাদের সম্প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবে তাদের দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি,এস)  স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকদেরকে আরো উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবেন, টেলিযোগাযোগের সেল ফোন বা ল্যান্ড ফোনের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল তাদের সম্প্রচারের জন্য বিদেশী স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর টিভি চ্যানেলগুলোর বিদেশ নির্ভরতা যেমন  কমে আসবে তেমনি সাশ্রয় হবে মহামূল্যবান  বৈদেশিক মুদ্রা। আমরা আমাদের দেশের সকল টিভি চ্যানেলের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের স্যাটেলাইট অন্যান্য দেশের টিভি চ্যানেলের জন্য ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারবো। আমাদের স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপোন্ডার রয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে যে, অনন্ত ২০টি ট্রান্সপোন্ডার বিদেশীদের জন্য ভাড়া দিবো।
বর্তমানে ইন্টারনেট যোগাযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার খুবই কার্যকর এবং জনপ্রিয়। কিন্তু এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেমন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা যেখানে সাধারণত ফাইবার অপটিক দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়া খুব কঠিন ব্যাপার সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছানো সম্ভব। এর বাইরেও যোগাযোগ স্যাটেলাইট তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। দুর্যোগের সময় ভূমি কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর থাকলেও স্যাটেলাইট তখন কার্যকর থাকে। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে পরেও স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ এর মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন আমাদের দূরদর্শী নেত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। যিনি ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রেখেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ হবে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। আর এই যাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক ভাবে নিরলস-ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। যাকে বাংলাদেশের মানুষ চিনে ‘ আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ হিসবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং  উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিই বাংলাদেশ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার যোগ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই একটি উন্নত দেশ হিসবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।  বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট একটি অসাধারণ উদ্যোগ হয়ে থাকবে এবং দেশের ইতিহাসের তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন যুগের সূচনা করবে। আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হতে যাচ্ছে মহাকাশে যাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকবে। বঙ্গবন্ধু-১ অবশ্যই বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তবে আমি নিশ্চিত যে, এটাই বাংলাদেশের একমাত্র বা শেষ স্যাটেলাইট নয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির উপর তাদের কাছে স্থানান্তরিত জ্ঞান থেকে উপকৃত হবে। আমরা আশাবাদী যে, সেইদিন খুব বেশি দূরে নেই যেদিন আমাদের দেশের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা আমাদের দেশেই এমন স্যাটেলাইট নির্মাণ করতে সক্ষম হবেন।
চন্দ্রাভিযানের মত অনুপ্রেরণামূলক গল্প আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে পড়ানো হয় যাতে আমাদের বাচ্চারা মহাকাশের বিশালতার মত বিষয় অনুধাবন করতে শেখে। নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এর চাঁদের বুকে পা রেখে উৎযাপন করা দেখে আমাদের সন্তানরা মহাকাশের বিশালতা নিয়ে ভাবতে শিখে। আমরা আশা করি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নভোচারী  হয়ে মহাকাশও জয় করবে এবং রকেট সাইন্সে বিস্ময়র প্রতিভারও সাক্ষর রাখবে।
থ্যালেস এলেনিয়া এবং স্পেসএক্স এর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, তারা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের কাজটি করছেন। আমাদের প্রথম স্যাটেলাইটের ইতিহাসে তাদের নাম এবং অবদান লিখা থাকবে।
আমি আজকের দিনে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; যিনি ১৯৭৪ সালে দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশের মহাকাশ-যুগের সূচনা করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৯ বছর আগে কিছু প্রতিসরুতি এবং স্বপ্ন নিয়ে। মহাকাশে বাংলাদেশের দেশের ইতিহাসে প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং স্বপ্ন পূরণের আরো কাছাকাছি চলে এসেছি।
প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।