বগুড়ার ভবানীপুরে ভূমিহীনদের বসতভিটায় মন্দির কমিটির সন্ত্রাসী হামলা ও জবর দখলের অভিযোগ

দেশবাণী
Spread the love

বাংলা বাণী:
উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্বেও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর মন্দির পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে স্থানীয় ভূমিহীনদের বসতভিটায় সন্ত্রাসী হামলা ও জোর পূর্বক জমি জবর দখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর কৃষক, শ্রমিক ও ভূমিহীন বসতবাড়ি রক্ষা ঐক্য পরিষদ।
সোমবার দুপুর ২টায় বগুড়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রফিকুল ইসলাম।
আয়োজকরা অভিযোগ করেন, গত রোববার মন্দির কমিটির কতিপয় সদস্য ভবানীপুর মৌজার ৩৯২ নং দাগের সম্পত্তি সন্ত্রাসী কায়দায় দলবল নিয়ে জোরপূর্বক দখলে নেয়ার অপচেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দিতে গেলে তারা শাবল, দা, খুন্তিসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে তাদের হুমকী প্রদান করে এবং জোর পূর্বক জমিতে প্রাচীর নির্মাণের অপচেষ্টা করে। পরে থানা পুলিশকে ফোন করলে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্মকে হাতিয়ার করে বগুড়ার কতিপয় মামলাবাজ ব্যক্তি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রায় ৩শ’ হিন্দু-মুসলিম দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের বসতবাড়ি জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। তারা বলেন, ১নং খাস খতিয়ানের এসব সম্পত্তি ব্রিটিশ আমল থেকেই সম্পূর্ণরূপে সরকারি খাস সম্পত্তি। সিএস ও এসএ খতিয়ানেও সরকারি ১নং খাস খতিয়ান হিসাবে রেকর্ডভুক্ত আছে। ১৯৫৬ সালে জমিদারী বিলুপ্ত করে এসব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয় এবং তৎপরবর্তীতে সরকার স্থানীয় লোকজনের নিকট স্থায়ী পত্তন প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে বসতবাড়ি রক্ষা ঐক্য পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ন আহ্বায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম বুলু। তিনি বলেন, আমরা ৪০-৫০ বছর যাবত জমির মালিক হওয়া সত্বেও মন্দির পরিচালনা কমিটি আমাদের মামলায় বিবাদী না করে গোপনে একটি একতরফা রায় নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সাথে সাথে উচ্চ আদালতে মোকর্দ্দমা দায়ের করেছি। বর্তমানে এসব সম্পত্তিতে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে স্থিতাবস্থা জারী করা হয়েছে। তারপরও মন্দির কমিটির নামে কতিপয় সন্ত্রাসী, মামলাবাজ, সাম্প্রদায়িক উস্কানীর মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এই ৩শ’ পরিবারের মধ্যে প্রায় আড়াইশ’ পরিবার একেবারে ভুমিহীন ও হতদরিদ্র। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। মন্দিরের সম্পত্তি বেদখল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে মন্দির কমিটি বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েছে। যেসব মামলায় আমাদের অনেক নীরিহ মানুষ জেল খেটেছেন। অনেকের বাড়িঘর মেরামত করতে কিংবা গাছের ডালপালা পর্যন্ত কাটতে দেয়া হচ্ছেনা। কোন কিছু হতে না হতেই পুলিশ পাঠিয়ে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে জমিদারী অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভবানীপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের সম্পত্তির এসএ রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে। যার গেজেট নোটিফিকেশন নং ৪৮২৪ এলআর ও ৪৮৩৯ এলআর, তারিখ ০২ এপ্রিল ১৯৫৬ইং।
তিনি বলেন, ১৯২৪ সালের দিকে প্রস্তুতকৃত সিএস রেকর্ডেও বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর মৌজার ১নং সিএস খতিয়ানের রেকর্ডে মালিকানা ভারত স¤্রাটের নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। অধিগ্রহণের তথ্য গোপন করে ভবানীপুর মন্দির পরিচালনা কমিটি এতদিন এসব সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি মর্মে দাবী করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্দির পরিচালনা কমিটি দিনদিন সন্ত্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের জায়গায় প্রাচীর নির্মাণ, সাইনবোর্ড স্থাপনসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা হুমকী ধামকী প্রদান করছে। তারা নিজেরাই নাশকতা করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকী দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নিজেদের বসতভিটা রক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৯০ নম্বর আদেশের ২ ধারার আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে অধিগ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। এছাড়াও ১৯৮৪ সালের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ এর বিধান অনুসারে কোনো বাস্তুকে তার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবেনা মর্মে উল্লেখ আছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভূমিমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ও বগুড়ার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট ভবানীপুর মৌজার সরকারি সম্পত্তিসহ ভুমিহীনদের বসতবাড়ি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্মকে হাতিয়ার করে অন্যায়ভাবে ভবানীপুরের স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক, ভুমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে মন্দির কমিটি কর্তৃক সকল দমন পীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করার জোর দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মোঃ নুরুজ্জামান, শ্রী অবিনাশ চন্দ্র রায়, আমজাদ হোসেন, অনিল কুমার মোহন্ত, মজিবুর বিশ^াস, মাসুদ রানা, রিপন, আব্দুল খালেক, আব্দুল হান্নান প্রমুখ।