তাবলিগ জামাতে রাজনীতিকরণের অভিযোগ উঠেছে

আন্তর্জাতিক
Spread the love

অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন তাবলিগ জামাতে রাজনীতিকরণের অভিযোগ উঠেছে। এর নেপথ্যে কাজ করছেন তাবলিগের সাদবিরোধী অংশ ও কয়েকজন হেফাজত নেতা।

তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র দিল্লির নিজামুদ্দীন মার্কাজকে উপেক্ষা করে তাবলিগের নেতৃত্বে পাকিস্তানকে সহায়তা করারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

এ লক্ষ্যে আগামী ২৮ জুলাই শনিবার মোহাম্মদপুর ঈদগাহ ময়দানে সমাবেশ করবে হেফাজত ও নিজামুদ্দীনবিরোধী নেতারা।

পোস্টারিংসহ জোরেশোরে চলছে সমাবেশের প্রস্তুতি। ‘চলো চলো ঢাকা চলো, ওয়াজাহাতি জোড় সফল করো’ স্লোগানসংবলিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে সারা দেশে।

এ সমাবেশে হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফীকেও উপস্থিত করার কথা রয়েছে।

তাবলীগের নিয়মবহির্ভূত এমন সমাবেশকে ঘিরে মাঠপর্যায়ে তাবলিগি সাথিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা যায়, তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মার্কাজের বিরোধিতা করছে পাকিস্তানের তাবলিগি নেতারা।

তাবলীগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মার্কাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শুরা গঠন করে রাইভেন্ড মার্কাজ।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারত্বের বিবাধে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।

১১ জন শুরা সদস্যের মধ্যে ৬ জন নিজামুদ্দীনের পক্ষে থাকলেও বাকি ৫ জন আলমি শুরার পক্ষে অবস্থান নেন।

আলোচিত ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও ২০ দলীয় জোটভুক্ত কয়েকজন ইসলামি রাজনীতিবিদও যুক্ত হন আলমি শুরার পক্ষে।

তাবলিগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতার পরই তাবলিগের কার্যক্রম রাজপথে গড়ানো শুরু করে।

বিগত বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দীনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেনি এ নেতাদের বিরোধিতায়।

তাবলিগের পুরনো সাথিদের ৫ দিনের জোড় ও আগামী ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে হেফাজত ও ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতারা।

২৮ জুলাই প্রকাশ্য সমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে তারা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চান।

এ সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে ২৩ জুলাই মোহাম্মদপুর কবরস্থান মসজিদে বৈঠকে বসেছেন নেতারা।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম সাবেক শরিক দল খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে অংশ্রগ্রহণ করেন ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা উত্তর জোনের যুগ্ম আহ্বায়ক কেফায়েতুল্লা আজহারী।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ৫০ হাজারের বেশি লোকসমাগম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

সমাবেশে আগতদের অবস্থান ও থাকা-খাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া এলাকার মাদ্রাসাগুলো ব্যবহার করা হবে।

সমাবেশে লোকসমাগম নিশ্চিত করতে ঢাকার সব মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ও উচ্চতর বিভাগের ছাত্রদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অরাজনৈতিক তাবলিগ জামাতের বিষয়টির এভাবে রাজনীতিকরণ পছন্দ করছে না তাবলিগের অধিকাংশ সাথিরা।

কাকরাইল মসজিদের কয়েকজন মুকিম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, তাবলিগের সব কার্যক্রম প্রচলিত রীতি ও রাজনীতির বাইরে ছিল।

সেখানে এভাবে রাজনৈতিক স্টাইলে তাবলিগ নিয়ে সমাবেশ করাটা দুঃখজনক। স্লোগানসংবলিত পোস্টার, রাজনৈতিক পরিভাষার অনুপ্রবেশ তাবলিগের অহিংস পরিচিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

তারা বলেন, বলা হচ্ছে তাবলিগের সংকট নিরসনে এমন সমাবেশ, রাজপথে এমন উসকানি সভা করে কীভাবে সমস্যা নিরসন হবে। এভাবে তো বিভক্তি ও সংকট আরও বাড়বে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে কাকরাইল মসজিদের এক দায়িত্বশীল যুগান্তরকে বলেন, তাবলিগ নিয়ে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিরা।

নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে মাঠ ঘোলা করাটা অবশ্যই স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছুর ইঙ্গিত। তাবলিগ জামাত সব সময় রাজনীতির বাইরে ছিল, এখনও রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে।