গাবতলীতে বিজয়ের সম্ভবনা নিয়ে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে নৌকা

দেশবাণী
Spread the love

সাব্বির হাসান, গাবতলী থেকে :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। সরগরম হয়ে উঠেছে দুই উপজেলার প্রতিটি হাট বাজারে চায়ের দোকানগুলোতে। খোঁজ খবর নিচ্ছেন কে কেমন আছেন। শুরু হয়েছে কানে কানে কথা। আড়ালে-আবডালে শলা- পরামর্শ। প্রার্থীরাও মহল্লায় মহল্লায় বৈঠক, কুশল বিনিময় ও ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটারদের মাঝেও চলছে প্রার্থীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের হিসাবনিকাশ। শীতের ভোরে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ছুটছেন সমর্থন নিতে ভোটারদের বাড়ী বাড়ী। ভোটের মাঠে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বেশ উৎসাহিত হয়ে সাংগঠনিকভাবে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতঃস্ফূত অংশগ্রহনের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ১৩জন স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী।

প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত ডাঃ মোস্তাফা আলম নান্নু (নৌকা), জাতীয় পার্টির বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মোঃ রেজাউল করিম বাবলু (ট্রাক), মোঃ সরকার বাদল (ঈগল), মোঃ নজরুল ইসলাম মিলন (কাঁচি), মোঃ নজরুল ইসলাম মিন্টু (কেটলি), ও মোঃ আমজাদ হোসেন (চার্জার লাইট), জাতীয় পার্টি-জেপি মোঃ আব্দুল মজিদ (বাইসাইকেল), ন্যাশনাল পিপল্স পাটির মোঃ ফজলুল হক (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মেহেরুল আলম মিশু (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মোঃ রনি (নোঙ্গর), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোঃ এনামুল হক (ছড়ি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (মশাল)।

বগুড়া-৭সংসদীয় আসন গাবতলী উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং শাজাহানপুর উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন এবং বগুড়া পৌরসভার দু’টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার রয়েছে ৫লাখ ১২হাজার ২শ’ ৫৮জন ভোটার। গাবতলী উপজেলা ও একটি পৌরসভায় ২লাখ ৭৭হাজার ২শ’ ৩৭জন। এতে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৩৮হাজার ২শ’ ১১জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ১লাখ ৩৯ হাজার ২৬জন। শাজাহানপুর উপজেলায় পুরুষ ও নারী ভোটার রয়েছে ২লাখ ৫৭হাজার ২শ’ ৭৭জন। এর মধ্যে ২জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছে। এই আসনে সংসদ সদস্য পদে ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও এখানে লড়াই হবে ত্রিমুখী। নৌকা, লাঙ্গল এবং ঈগল প্রতীকের মধ্যে। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের প্রচারণাও চলছে ঢিলেঢালাভাবে। এই আসনে ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের একজন কর্মীবান্ধব, সাংগঠনিক কর্মদক্ষ সংসদ সদস্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল গাবতলী-শাজাহানপুরবাসী। কিন্তু এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে জনপ্রিয় ও কর্মদক্ষ প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নুর হাতেই নৌকা মার্কা তুলে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি ঘাঁটিতে নমিনেশন দেন এবং নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মেদ -এর সঙ্গে লড়াই করে সামান্য ভোটে অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু পরাজিত হয়েছিলেন।
দীর্ঘ বর্ণাঢ্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু। একনজরে ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নুর রাজনৈতিক জীবন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি বগুড়া জেলা আ’লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য, ২০১৫ সাল হতে অদ্যাবধি বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। ২০০৯ সাল হতে অদ্যাবধি বিএমএ বগুড়া’র সভাপতি। ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি বগুড়া পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিএমএ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার কলোনী সোনালী জেনারেল হাসপাতাল ও টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক (শিশু) এর দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি দীর্ঘদিন আগে থেকেই গাবতলী ও শাজাহানপুরসহ জেলার গরীব-অসহায় রোগীদের স্বল্প ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। জীবনের বেশীরভাগ সময়ই অসহায় মানুষের সেবা করার মধ্যেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। যার কারনেই সাধারণ মানুষের মাঝে তার বেশ সুনাম রয়েছে তার। ডাঃ নান্নু বলেন, গাবতলী ও শাজাহানপুরের মানুষ উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই এই আসনে অনেক আগে থেকেই নৌকা মার্কার বিজয়ের সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এজন্য এই আসনে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমি এমপি নির্বাচিত হলে গাবতলী-শাজাহানপুরবাসীর উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবো। দুই উপজেলার এখনো যেগুলো অঞ্চল অনুন্নত এই অঞ্চলগুলো চিহিৃত করে উন্নত করবো। সর্বোপরি গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলাকে ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। এদিকে জাতীয় পার্টির শাসন আমলে আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু ১৯৮৬ সালে এবং ১৯৮৮ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি দুইবার এমপির দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয়তাও কম নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদশ ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনিও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তারও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।