
বাংলা ডেস্ক :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে ১৪৮-১৬৬টি আসন পেতে পারে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি ১১৯-১৩৭টি ও অন্যান্য দলগুলো ১৫টি আসন পেতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত নিজের এক গবেষণার তথ্যে এই ফলাফল তুলে ধরেছেন। ‘ভোটারের মন বুঝে’ ও আগের চারটি ‘অপেক্ষাকৃত ভালো’ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান অধ্যাপক আবুল বারকাত।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। আবুল বারকাত এককভাবে এই গবেষণা করেছেন জানিয়ে বলেন, এর সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
গবেষণায় আগের যে চারটি ‘অপেক্ষাকৃত ভালো’ নির্বাচনের ফলাফলকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ১৯৯১, ১৯৯৬-এর জুন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন।
ড. আবুল বারকাত বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে এবং সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য নির্বাচনী মাঠ সমান হলে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৮ থেকে ১৬৬টি, বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি এবং অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত, যেগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভিত্তি আসন’ বা ‘সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত আসন’। এই ১৫৫টি ভিত্তি আসনের মধ্যে ৭০টি করে আসন পেতে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বাকি ১৫টি আসন পেতে পারে জাতীয় পার্টি, জামায়াত, এলডিপি ও বিজেপি।
তিনি আরও বলেছেন, বড় দুই দলের মধ্যে যেকোনো দলকে সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় আরও ৮১টি আসন পেতে হলে ‘দোদুল্যমান ভোটারদের’ ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেকোনো আসনে জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদানের সিদ্ধান্তে দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন, নিষেধাজ্ঞা, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর এবং সংশ্লিষ্ট কাউন্টার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
আবুল বারকাত বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কোন দলের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা জাতীয় কৌতূহলের বিষয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দোদুল্যমান ভোটারদের মন বুঝতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গেও খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে দলভিত্তিক সম্ভাব্য ফলাফলে উপনীত হয়েছি।’
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ভোটার দলের অনুগত ভোটার। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আওয়ামী লীগের, ৩০ শতাংশ বিএনপির আর ১০ শতাংশ অন্যান্য দলের। আর এর বাইরের ৩০ শতাংশ ভোটার দলীয় অনুগত নন। এই দোদুল্যমান ৩০ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন, তা পূর্বনির্ধারিত নয়।
দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ৫টি উপাদান প্রভাব রাখবে বলে গবেষণার ফলাফলে বলা হয়। এগুলো হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, ২০১৪ ও ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন, পদ্মা সেতু ও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি উপাদানের সুবিধা পাবে বিএনপি। আর পদ্মা সেতুর সুবিধা পুরোটাই পাবে আওয়ামী লীগ। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিতে জাতীয় সংহতির ইস্যু বানাতে পারলে এর সুবিধা আওয়ামী লীগ পেতে পারে।

