মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার গল্প

আন্তর্জাতিক
Spread the love

থাই গুহায় ১৭ দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হওয়া দেশটির ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ নিজেদের বেঁচে থাকার কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে সবাইকে এই মন্ত্রের কথা জানিয়েছে।

দীর্ঘ জীবন-মরণের লড়াই শেষে ওয়াইল্ড বোয়ারস ফুটবল দল আজ বুধবার প্রথম জনসমক্ষে এসেছে। এ সময়ে তারা হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মুখে ছিল প্রাণখোলা হাসি।

দুই ব্রিটিশ ডুবুরি ১২ জুলাই যখন তাদের হদিশ পায় সেই সময়টার কথা স্মরণ করল ফুটবল দলের ১৪ বছর বয়সী সদস্য আদুল সাম অন। ওই সময়টিতে তারা গুহার কয়েক কিলোমিটার ভেতরে বন্যাকবলিত একটি আবদ্ধ জায়গায় উবু হয়ে বসেছিল।

আদুল জানায়, এটা ছিল জাদুর মতো। ডুবুরিদের জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার আগে আমাকে অনেক কিছু ভাবতে হয়েছে। তখন সবাই ছিল আনন্দিত। ১০ দিনের মধ্যেই এটাই ছিল তাদের প্রাণ ফিরে পাওয়ার মুহূর্ত।

বুধবার চিকিৎসক, স্বজন ও বন্ধুরা ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের ২৫ বছরের যুবক কোচকে স্বাগত জানান। এ সময় তাদের অনেকের শরীরে দেশটির ঐতিহ্যবাহী হলুদ পোশাক ছিল।

থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে দেখা যায়, নিজ দলের প্রতীক ওয়াইল্ড বোয়ারস ছাপাঙ্কিত টি-শার্ট পরে ও ফুটবল হাতে তারা মঞ্চে প্রবেশ করেছে। তাদের পেছনে থাই হরফে ওয়াইল্ড বোয়ারসকে বাড়িতে আনা হচ্ছে লেখা বিশাল একটা ব্যানার ছিল।

মঞ্চটি সাজানো হয়েছিল একটি ফুটবল মাঠের আদলে, যেখানে গোলপোস্ট ও নেটও ছিল। সেখানে ফুটবল নিয়ে এসে খেলতে খেলতেই কথা বলেছে কিশোররা। আর তখনই সবাই জানতে পেরেছে তাদের ১৭দিনের অজানা সব কথা।

দলের এক কিশোর বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে জানায়, আমি সবাইকে বলেছি, লড়াই চালিয়ে যাও, হতাশ হয়ো না।

The 12 boys and their soccer coach who were rescued from a flooded cave arrive for a news conference in the northern province of Chiang Rai, Thailand, July 18, 2018. REUTERS/Soe Zeya Tun

গত ২৩ জুলাই মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হয় তারা। দশদিনের মাথায় গত দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহা মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে তাদের খোঁজ পায়।

দলটির কোচ একাপল জানায়, কিশোরদের বের করে আনার সময় তাদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যাদের বাড়ি দূরে তাদেরকেই গুহা থেকে আগে বের করা হয়েছে, যাতে তারা সবাইকে বলতে পারে কিশোররা ভালো আছে।

একাপোল জানায়, আমার গুহার দেয়ার খোঁড়ার চেষ্টা করেছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইনি।

এক কিশোর জানায়, গুহার দেয়াল খুঁড়তে আমরা পাথর ব্যবহার করেছি। তিন থেকে চার মিটার খুঁড়েছিলাম। কিন্তু সে চেষ্টা কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি।

একাপল জানায়, কিশোরদের সবাই সাঁতার জানত। কিন্তু তাদের কেউ কেউ খুব ভালো সাঁতারু ছিল না।

গুহায় প্রবেশের আগে তারা খাবার খেয়েছিল। কিন্তু যেহেতু সেখানে তাদের ঘণ্টাখানেক থাকার পরিকল্পনা ছিল, তাই সঙ্গে কোনো খাবার নেয়নি।

টি নামের এক কিশোর জানায়, আমার কেবল পানি খেয়েছি। প্রথম দিন ভালো ছিলাম। কিন্তু দুই দিন যেতেই ক্লান্তি অনুভব করতে লাগলাম।

দলটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য জানায়, আমার গায়ে কোনো বল ছিল না। আমি খাবারের কথা ভাবতে চেষ্টা করেনি। তাই আমার কোনো ক্ষুধা লাগেনি।

বাবা-মায়ের বকুনি খাওয়ার ভয়ও ছিল তাদের মনে। এক কিশোর জানায়, বাড়ি ফিরতে পারবো না ভেবে আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল, মা আমাকে বকবে।

তবে এরকম দুষ্টুমির জন্য কিশোররা ক্ষমা চেয়েছে।