বগুড়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রংপুরের সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজছে স্থানীয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে এক রিকশাচালকের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। তবে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মেলেনি। এমনকি ওই ব্যক্তি গত ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে কোন ট্রাকে চড়ে রওনা হয়েছিলেন সেটিও সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তবে এরই মধ্যে ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা তার স্ত্রীকে আইসোলেশন ইউনিটে তার থেকে কিছুটা দূরে রাখা হয়েছে এবং আর তার শ্যালককে রংপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসার প্রয়োজনে সংস্পর্শে আসা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ৫ চিকিৎসক ও ৮ নার্সসহ ১৬ জনকে গত শুক্রবার থেকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ব্যক্তিকে বগুড়ায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মহাস্থান বন্দর থেকে উদ্ধারকারী স্থানীয় এক সাংবাদিক এবং শিবগঞ্জ উপজেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা এক অ্যাম্বুলেন্স চালককেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
বগুড়ায় করোনা আইসোলেশন সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন কর্মকর্তা রোববার বগুড়ায় এসে করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তি নিজের স্ত্রী এবং শজিমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্য যাদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন তাদের সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। এমনকি আরও কেউ কোনভাবে ওই রোগীর সংস্পর্শে গিয়েছিলেন কি-না সে সম্পর্কেও তিনি তথ্য জানার চেষ্টা করেন।
রংপুরের ওই ব্যক্তি গায়ে জ্বর ও শ্বাস কষ্ট নিয়ে গত ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে ট্রাকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তবে জ্বরসহ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ২৯ মার্চ ভোরে তিনি বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় নেমে যান। এরপর স্থানীয় এক সাংবাদিক তাকে পুলিশের সহযোগিতায় রিকশা ভ্যানে তুলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে তার সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। শ্বাস কষ্টের পাশাপাশি ওই ব্যক্তি নিজেকে হৃদরোগী হিসেবে পরিচয় দিলে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রথমে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করান। কিন্তু শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে পরদিন ৩০ মার্চ তাকে করোনার জন্য খোলা আইসোলেশন ইউনিট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ১ এপ্রিল অন্য রোগীর সঙ্গে তার নমুনাও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। ২ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ এলেও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হবে আইইডিসিআরের এমন সিদ্ধান্তের কারণে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা থেকে বিরত থাকা হয়।
তবে বগুড়া শজিমেকের চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে বিষয়টি জেনে যান। এরপর পরদিন ৩ এপ্রিল শুক্রবার শজিমেক হাসপাতালের ৫ চিকিৎসক ও ৮ নার্সসহ ১৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তিকেও অন্য রোগীদের পৃথক করা হয়। ওই একই দিন মহাস্থান থেকে তাকে উদ্ধার করা স্থানীয় সেই সাংবাদিক ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালককে হোম কোয়ারেন্টানে চলে যেতে বলা হয়।
এদিকে বগুড়ায় মহাস্থান বন্দরে নামার পর ওই ব্যক্তিকে যে রিকশা-ভ্যানে তুলে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল তার চালকের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে তিনি যে ট্রাকে চড়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বগুড়া পর্যন্ত এসেছিলেন সেই ট্রাকের ব্যাপারেও কোন তথ্য পুলিশের কাছে নেই।
যোগাযোগ করা হলে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেই রিকশা-ভ্যান চালকের খোঁজ করছি। কিন্তু কেউ তাকে সনাক্ত করতে পারছেন না। তার পরেও আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে ট্রাকের ব্যাপারে কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তি বর্তমানে যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, করোনাআক্রান্ত ওই ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়াটা খুব জরুরি। কারণ, সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে সেটি অন্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা একজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
