
জঙ্গিবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচার করায় পরিচালক ও অভিনেতা খিজির হায়াত খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এ পরিকল্পনা করে। এরইমধ্যে ওই অভিনেতার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার বাসা রেকিও করা হয়। হত্যা মিশন বাস্তবায়নে এবিটির অপারেশন শাখার এক জঙ্গি সৌদী থেকে ঢাকাতেও আসে।
তবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা খিজির হায়াতকে হত্যায় দায়িত্ব পাওয়া দুই জঙ্গিকে গত সোমবার রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এ পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়।
ওই দুই জঙ্গি হলো- এমদাদ ওরফে সবুজ ওরফে আবু সালমান ওরফে হুজাইফা এবং আবু বক্কর ওরফে ফাহিম ওরফে আবুল্লাহ ফাহিম। মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত নভেম্বরে খিজির হায়াত খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এতে জঙ্গিবিরোধী নানা প্রচারণার পাশাপাশি এক সাহসী যুবকের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্প ফুটে ওঠে। এর আগে তিনি একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম খান বলেন, জঙ্গিবিরোধী চলচ্চিত্র তৈরি করায় খিজির হায়াত খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল এবিটির জঙ্গিরা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের নজরদারী করে শনাক্তের পর গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনার বিস্তারিত জানতে ও সহযোগীদের চিহ্নিত করতে দুই জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানায়, ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপসে ‘এসো কাফেলাবদ্ধ হই’ নামে একটি গ্রুপে খিজির হায়াতকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করে ওই গ্রুপটি। সেখানে আলোচনায় আবু বক্করকে দায়িত্ব দেওয়া খিজির হায়াতকে অনুসরণ করে তার চলাফেরা এবং ঠিকানা সংগ্রহ করতে।
এ নির্দেশনা অনুযায়ী ওই জঙ্গি সম্প্রতি কুমিল্লায় খিজির হায়াতের গ্রামের বাড়ি রেকি করে। সে অপর একজন সহযোগীকে নিয়ে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে খিজিরের স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলে। ঢাকায় তার বাসা এবং অফিসের তথ্য সংগ্রহ করেছিল তারা। পরে বক্কর এসব তথ্য সৌদি আরবে অবস্থানকারী জঙ্গি এমদাদকে জানায়। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এমদাত সম্প্রতি সৌদি থেকে দেশে আসে।
ওই সূত্রটি জানায়, জঙ্গি এমদাদ কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করে ২০১৬ সালে সে কাতার হয়ে সৌদি আরবে যায়। মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায়ই সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অপর জঙ্গি আবু বক্করও যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। জঙ্গিবাদে জড়িয়েই দুইজনের পরিচয় ঘটে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এবিটির শীর্ষ নেতা ওসমান গণির নির্দেশে ওই গ্রুপটি খিজির হায়াতকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ওসমান আত্মগোপনে থেকে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে এবিটি ও আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গি সংগঠন দুটিকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

