কাদেরকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার আহ্বান রিজভীর

রাজনীতি
Spread the love

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, কাদের সাহেব প্রতিনিয়ত বিএনপিকে উপদেশ দিচ্ছেন। সভা-সমিতি, মঞ্চ, গণমাধ্যম ও ব্রিফিংয়ে বিএনপির কি করা উচিৎ, বিএনপির পরিণতি কি হবে, বিএনপি নির্বাচন ভীতিতে ভুগছে, বিএনপি সংসদে যোগ দেবে ইত্যাদি নানা কথার খৈ ফুটাচ্ছেন প্রতিদিন। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের সাহেব শালীনতা, ভব্যতার গুণমান বিবেচনা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে ক্রমাগত উপদেশের ভাঙ্গা টেপ রেকর্ড বাজিয়েই চলেছেন। ‘মিডনাইট ইলেকশন’ এর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন স্বেচ্ছায় বিএনপির উপদেষ্টা হতে চলেছেন। সুতরাং খামোখা আওয়ামী লীগে থেকে তার লাভ কী, বরং ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপির দরজা খোলা আছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো বলেন, এমনিতেই অনাচারের পাহাড়সম স্তূপে আওয়ামী নেতাকর্মীরা ভীত সন্ত্রস্ত, কখন কী হয় আতঙ্কে তাদের সারাদিন কাটে। বিভিন্ন এলাকায় তারা তলেতলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীরা আসলেই উদ্বিগ্ন। ক্ষমতার বৃক্ষ উপড়ে যাওয়ার পর অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সেজন্য স্বেচ্ছায় বিএনপির উপদেষ্টার আসনে বসতে চাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবসহ অন্য নেতারা।

তিনি বলেন, বিএনপি সংসদে না গেলেও প্রতিনিয়ত বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে নিয়ে সংসদে বিষোদগার করছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিজয় ছিল প্রত্যাশিত। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং জনগণ বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।’ এদেশে বাক-স্বাধীনতা শুধু একজনেরই আছে, তিনি হলেন ‘মিডনাইট ভোট’ এর প্রধানমন্ত্রীর। তিনি সবার বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে একাই লাগামহীন কথাবার্তা বলেন। বিরোধী দলকে কারাগারে ঢুকিয়ে নির্বাচনী ময়দান শূন্য করার পর বিজয় তো প্রত্যাশিত হবেই। রাতে ভোটারদের ঘুমানোর সময় প্রশাসন ও পুলিশ ব্যালট বাক্স পূর্ণ করলে সেই ভোট তো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়ই, কারণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবাধে ব্যালট পেপারে সুষ্ঠুভাবে সিল মারতে পারে। ভোটের দিনের ভোট ‘আউট সোর্সিং’ করে আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স ভরে দিয়ে তো ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবেই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করলে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু তো হবেই। তবে শেখ হাসিনা ও দলের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য কেউ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেনি। এমনকি মহাজোটের শরীকরাও এখন বলছে যে, ভোট হয়েছে আগের দিন রাতেই।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই, আছে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ চোখে পড়ে না প্রধানমন্ত্রীর। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের ময়দানে রক্তক্ষয়, নজীরবিহীন গ্রেফতার অভিযান ও সংসদীয় এলাকায় রক্তাক্ত হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের বেশ কিছু সংখ্যককে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক দমনের সকল শক্তি দিয়ে বিরোধী শক্তিকে অবরুদ্ধ করে এক অভিনব ‘মিডনাইট মহা ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ এর পর সেই সরকারের মন্ত্রীরা তামাশার মঞ্চে কৌতুক প্রদর্শন করা ছাড়া আর কিইবা এই মূহুর্তে করতে পারে। কারণ ভোট ডাকাতির সফলতা ছাড়া চারিদিক থেকে তারা ব্যর্থ। পথের কাঁটা সরানোর জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে এক বছর ধরে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। দাগী খুনিদের মুক্তি দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তি জাহালমকে তারা জেল খাটায়। বাহুবলে বিরোধী শক্তিকে তারা নির্মূল করার চেষ্টায় লিপ্ত। জাতীয় থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দুর্নীতির বিস্তার, নারী-শিশু নির্যাতনের ভয়ঙ্কর প্রকোপ, সড়কে মৃত্যুর মিছিল, গুম ও খুনের ভয়াবহ আধিপত্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণসহ দেশব্যাপী গণতন্ত্র এখন হাহাকার করছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতির প্রতি যারা অবাধ্য তাদের ঠিকানা হচ্ছে কারাগার।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও সারাদেশে বিএনপির বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার বেলা ২-৩০টায় কেবলমাত্র ঢাকায় রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী একই দাবিতে ঢাকা মহানগরী বাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, নাজমুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।